যে ৮টি মশলা নিয়মিত গ্রহণে শরীর থাকবে রোগ বালাই হতে মুক্ত

যে ৮টি মশলা নিয়মিত গ্রহণে শরীর থাকবে রোগ বালাই হতে মুক্ত

মশলা যেন আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। বিশেষ করে এশিয়ান কান্ট্রি গুলোর খাবার এ মশলার ব্যবহার সবচেয়ে বেশি হয়। মশলার ব্যবহার খাবার এ রঙ, গন্ধ এবং স্বাদে পরিবর্তন নিয়ে আসে। খাবার কে আরো বেশি লোভনীয় করে তোলে। বাংলাদেশ, ভারত এবং পাকিস্তান এ সবচেয়ে বেশি মশলা ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে ভারত হলো মশলার জন্য বিখ্যাত। ভারতের দার্জিলিং, কাশ্মিরে অসংখ্য জাতের মশলা চাষ হয়।

প্রাচীন যুগ থেকে মশলা ব্যবহার হয়ে আসছে৷ তবে খাবারের পাশাপাশি মশলা হারবাল মেডিসিন হিসেবেও সফল ভাবে কাজ করে। পূর্বের রাজা-মহারাজা সময় থেকেই বৈদ্যরা এসব মশলা ব্যবহার করে বিভিন্ন রোগের ওষুধ। কালের পরিবর্তন হলেও মশলার উপকারিতার পরিবর্তন হয়নি। এখনো এসব মশলা বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। মশলাতে ক্যালরি এর পরিমান কম থাকার কারনে এর কোনো সাইড এফেক্ট নেই।

চলুন তাহলে জেনে নেই এমন কিছু উপকারী মশলার নাম এবং গুনাগুনঃ

১. মরিচ- মরিচ এ রয়েছে অনেক বেশি পরিমাণ এ ভিটামিন এবং এন্টি অক্সিডেন্টস যা ক্যান্সার এবং পাকস্থলী তে আলসার হওয়া থেকে রক্ষা করতে সক্ষম। মরিচ শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে যা ওজন কমাতে ও সাহায্য করে। এর পাশাপাশি যারা টাইপ-২ ডায়াবেটিস এর রোগী তাদের জন্য ও মরিচ অনেক বেশি উপকারী। মরিচ শরীরের ইমিউনিটি বৃদ্ধি করে এবং বিভিন্ন রোগ বালাই কে প্রতিরোধ করে।

২. এলাচ- প্রতিদিন ২/৩টি এলাচ খেলে আপনার মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হবে না এবং আপনার পাকস্থলীর হজম শক্তি বেড়ে উঠবে। এছাড়া এলাচ রক্তচাপ এবং শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। শুধু তাই নয়। এলাচ নিয়মিত খেলে এটি টিউমার, মানসিক চাপ এর পাশাপাশি ব্যাকটেরিয়া জনিত যেকোনো আক্রমণ থেকে রক্ষা করবে। পেশির ব্যাথা, হাঁপানির জন্য এলাচ উপকারী। এলাচ শরীরের টক্সিন দূর করতে সক্ষম এবং ত্বকের যত্নে সাহায্য করে।

৩. লবঙ্গ- লবঙ্গ তে রয়েছে এন্টি অক্সিডেন্টস যা শরীরের কোষ গুলোকে ক্ষয় হওয়া থেকে রক্ষা করে। লবঙ্গ তে থাকা এন্টি অক্সিডেন্টস হার্টের রোগ, ডায়াবেটিস এবং কিছু ক্যান্সারের প্রতিরোধক হিসেবেও কাজ করে। তাছাড়া কাশির সময় লবঙ্গ খেলে এতে থাকা ঝাঁঝ কাশি কমাতে সক্ষম। সর্দি-জ্বর, সাইনাস, দাঁতের ব্যাথা, মাথা ব্যাথা, পেট ফাঁপা সমস্যা উপশম দেয়। স্ট্রেস এবং ব্রণের চিকিৎসা ও হয় লবঙ্গ দিয়ে।

৪. দারচিনি- দারচিনি হৃদরোগ এর ঝুঁকি কমায়। এটি শরীরে কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ এ রাখে এবং রক্তচাপ কমাতেও কাজ করে থাকে। এর পাশাপাশি রক্তে সুগার এর পরিমাণ কমাতেও দারচিনি ব্যাপক ভাবে কাজ করে। স্কিনের ব্রণ এর দাগ দূর করতে দারচিনির জুড়ি নেই। এর এন্টি ইনফ্লেমেটরি শরীরকে যেকোনো ব্যাকটেরিয়া এর আক্রমণ থেকে রক্ষা করে এবং টিস্যুর ক্ষতি রোধ করে।

৫. মেথি- মেথি উপকারিতা শরীর পর্যন্তই সীমাবদ্ধ নয়। চুল ও ত্বকের যত্নে ও মেথি ব্যবহার করা হয়। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করে এবং ইউরিক অ্যাসিড এর পরিমাণ হ্রাস করে। মেথি গ্যাস্ট্রিক এর জন্য ও উপকারী। কোষ্ঠকাঠিন্য, শরীর ফোলা, পেশির ব্যাথা থেকে ও আরাম দেয় মেথি। এর পাশাপাশি চুল পড়া রোধ, চুলের গোড়া মজবুত করা ত্বক পরিষ্কার রাখতে ও মেথি সাহায্যকারী। রক্ত স্বল্পতা রোধে ও মেথি কাজ করে।

৬. রসুন- রসুন স্কিনে ব্রণ নিরাময়ে উপকারী। এছাড়া শরীরের রক্ত সঞ্চালন সচল রাখতে এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রসুন কাজ করে থাকে৷ হৃদরোগ এর নিরামক বলা হয় রসুনকে। ভোরে খালি পেটে এক কোয়া রসুন খেলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। এছাড়া রসুন চোখের পাওয়ার ঠিক রাখে। বাতের ব্যাথা, সর্দি কাশি কিংবা শ্বাসকষ্ট থেকে উপশম পেতে রসুন উপকারী।

৭. কাঁচা হলুদ- হলুদ শরীরের যেকোনো আঘাত সহজে শুকাতে সাহায্য করে। এর পাশাপাশি রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস রোগীরা হলুদ এর পানি খেলে সহজে সুস্থ হতে পারেন। হলুদ ত্বকের জন্য ও উপকারী। হলুদ ত্বকে ব্যবহার এ ত্বক হয় দাগমুক্ত, উজ্জ্বল এবং প্রাণবন্ত। স্কিনের যেকোনো এলার্জি জনিত সমস্যা দূর কর‍তে হলুদ উপকারী। হার্ট ব্লকেজ এব মেদ কমাতে হলুদ উপকারী।

৮. জাফরান- জাফরান রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণ এ রাখে। এতে আছে এন্টি ইনফ্ল্যামেটরি, এন্টি ফাঙ্গাল যা শরীরকে যেকোনো ইনফেকশন থেকে রক্ষা করে। জাফরান শরীরের যেকোনো ব্যাথার প্রতিষেধক। বাতের ব্যাথা, জয়েন্ট এর ব্যাথা মাংসপেশীর ব্যাথা দূর করতে সহায়ক। শরীরের হরমোন কে উদ্দীপিত করে এবং ঘুমের জন্য উপকারী। এছাড়া গ্যাস্ট্রিক, ক্যান্সার, দুশ্চিন্তা জনিত সমস্যা থেকেও জাফরান উপশম দেয়। গর্ভাবস্থায় এটি শরীরে আয়রন ও হিমোগ্লোবিন এর ঘাটতি পূরন করে।

যে সমস্যা গুলো মশলার মাধ্যমে সমাধান করা যায় তার জন্য আর ওষুধ এর কি প্রয়োজন। তবে এর মানে এই না যে আপনি মশলার আশায় বসে থাকবেন। যেকোনো শারীরিক সমস্যার জন্য ডাক্তারের শরনাপন্ন হওয়া উচিত। তবে যতক্ষণ সুস্থ আছেন ততক্ষণ মশলার মাধ্যমে নিজে সুস্থ রাখতে পারেন। ঘরোয়া পদ্ধতিতে নিজের এবং পরিবারের ছোট খাটো রোগ বালাই সারিয়ে তুলতে পারবেন। কারন রোগ বালাই যত কম থাকবে, শরীর তত বেশি উদ্দিপন থাকবে। কাজে তত বেশি মন বসবে। শরীর ভালো থাকলেই মন ভালো থাকবে।

RELATED ARTICLES